Kalo Jadukor By Humayun Ahmed (কালো জাদুকর ) - Free Bangla Books Download Now

Sunday, November 20, 2011

Kalo Jadukor By Humayun Ahmed (কালো জাদুকর )

পৌষ মাসের প্রচন্ড শীত। এরই মধ্যে গলায় মাফলার পেচিয়ে গায়ে শাল জড়িয়ে মবিন উদ্দিন সাহেব তার বোন রাহেলার বাড়ি যাচ্ছেন। মবিন উদ্দিনের বয়স পঞ্চাশ। নেত্রকোনা শহরে "বিউটি বুক সেন্টার" নামে তার একটা বইয়ের দোকান আছে। দোকানের বিক্রি-বাট্টা তেমন ভাল না।কোনও রকম সংসার চালাচ্ছেন এই দিয়ে। স্ত্রী এবং ১৩ বছরের এক অন্ধ মেয়ে নিয়ে তার সংসার।মেয়ের নাম সুপ্তি।সুপ্তি দেখতে অসাধারন সুন্দর। সব থেকে সুন্দর ওর চোখদুটি। কেউ ওর চোখদুটি দেখলে বিশ্বাস করতে চাইবেনা যে সে অন্ধ। আরও একজন মানুষ মবিন উদ্দিনের সংসারে ছিল। তার বড় ছেলে টুনু। বছর ছয়েক আগে প্রচন্ড জ্বর উঠে মারা গেল।ও তখন ভার্সিটির হোস্টেলে ছিল। জ্বর বেশি দেখে শিক্ষকরা মিলে ওকে হাসপাতাল নিয়ে যায়। মবিন সাহেব হাসপাতালে গিয়ে দেখেন ছেলে অজ্ঞান। নার্স এসে বলল ওর জ্ঞ্যান ফিরতে দেরি হবে, আপনি বরং এই ফাকে চা খেয়ে আসুন। তিনি চা খেয়ে ফিরে এসে আর ছেলেকে পেলেন না। শুনলেন মৃত্যুর আগে টুনুর জ্ঞ্যান ফিরেছিল। সে জিজ্ঞেস করেছিল "বাবা আসেনি?" এর জন্য তিনি গত ছয় বছর ধরে চা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। সেদিন চা খেতে না গেলে ছেলেকে শেষ দেখা দেখতে পেতেন। বর্তমানে ফেরা যাক। রাহেলার বাড়ি যাওয়ার সময় তিনি দেখলেন এক জায়গায় অনেকটা জটলা। এই শীতের রাতে এইরকম জটলা হওয়ার কথা না। তিনি একটু এগিয়ে দেখলেন একটা ছেলে ম্যাজিক দেখাচ্ছে। এই প্রচন্ড শীতেও ছেলেটা শুধুমাত্র একটা পাতলা হাফ হাতা শার্ট পড়ে আছে। দেখে তার মায়া লাগল। ম্যাজিক দেখানোর পর ছেলেটা হয়তো সবার কাছে হাত পাতবে।বেশিরভাগ মানুষই কিছু না দিয়েই চলে যাবে।তিনি একবার ভাবলেন পকেটের দুটা পাঁচ টাকার নোটের একটা দিয়ে দিই। আবার ভাবলেন তার মত দরিদ্রর কাছে পাঁচ টাকা অনেক টাকা। রাহেলার বাড়ি থেকে ফেরার সময় ষ্টেশন এর টিকিট কাটার সিড়িঘরে দেখলেন ঐ ম্যাজিশিয়ান ছেলেটা বসে আছে।তিনি ভাবলেন ছেলেটাকে বাড়ি নিয়ে একবেলা ভাত খাওয়ানো যাক। ছেলেটাকে নিয়ে তিনি রিকশায় উঠলেন। জিজ্ঞেস করলেন তোমার নাম কি? ছেলেটা উত্তর দিল "টুনু"। মবিন সাহেব ভিতরে ভিতরে চমকে উঠলেন। টুনু তার মৃত ছেলের নাম। এবং তিনি আরেকটা বেপার খেয়াল করে চমকে উঠলেন।ছেলেটার চেহারা অবিকল তার ছেলে টুনুর মত। সেদিন সেই ছেলেটাকে বাড়ি নিয়ে না গেলে তার জীবনটা অন্যরকম হতে পারত। ছেলেটাকে পেয়ে তার মেয়ে সুপ্তি অসম্ভব আনন্দিত। তার স্ত্রী প্রথমদিন গাইগুই করলেও পরে তিনিও ছেলেটাকে পছন্দ করতে লাগলেন। তার মৃত ছেলে টুনুর সাথে তার চেহারার মিল আছে দেখেই হয়তোবা। ম্যাজিশিয়ান ছেলেটা বাড়ি আসার পর আজব আজব ঘটনা ঘটতে লাগল। মবিন সাহেব চা খাওয়া ধরলেন। বাড়িতে কখনও ভাঁপা পিঠা হতোনা, কারন মবিন উদ্দিনের মৃত ছেলে টুনুর খুব পছন্দের ছিল ভাঁপা পিঠা। ভাঁপা পিঠা বানানো হচ্ছে ম্যাজিশিয়ান ছেলেটার জন্য।ছয় বছর ধরে টুনুর ঘরটা বন্ধ ছিল, বাকি জীবন বন্ধই থাকবে সেরকম কথা ছিল। সেই ঘরটা ম্যাজিশিয়ান ছেলেটার জন্য খুলে দেয়া হলো। মবিন সাহেব খেয়াল করেছিলেন যে ম্যাজিশিয়ান ছেলেটা মনের কথা বুঝতে পারে।একবার দুপুরে খাওয়ার পর লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে তার মনে হল জর্দা দিয়ে একটা পান খেলে ভালো লাগত। কিন্তু আলস্যের কারনে উঠতে মন চাচ্ছিল না। তখন সুপ্তি এসে বলল- -বাবা এই নাও তোমার জর্দা দিয়ে পান। ম্যাজিশিয়ান ভাইয়া পাঠিয়েছে। ভয়ের বেপারটা হলো কিছুদিন যাবত তিনি নিজেও মানুষের মনের কথা বুঝতে পারছেন। সুপ্তিকে তিনি ম্যাজিশিয়ান ছেলেটাকে গাছ ভাইয়া ডাকতে শুনেছেন। সুপ্তিকে জিজ্ঞেস করে জেনেছেন ছেলেটা নাকি নিজেকে গাছ বলে। তিনি নিজেও স্বপ্নে একবার এই বেপারটা দেকেছেন। ছেলেটা নিজেকে কেনো গাছ বলে এইটা একটা রহস্য। ছেলেটা চলে যাওয়ার আগে একটা চিঠি লিখে মবিন উদ্দিনের হাতে দিয়ে যায়। সেখানে সব রহস্যের সমাধান থাকে। যাওয়ার আগে ছেলেটা সুপ্তিকে একটা উপহার দিয়ে যায়। সুপ্তির এই ক্ষুদ্র জীবনের সব থেকে সেরা উপহার। ব্যাক্তিগত মতামতঃ অনেকদিন পর এক নিশ্বাসে কোনও বই শেষ করলাম। সুপ্তি মেয়েটাকে খুব ভাল লেগেছে। মেয়েটা অন্ধ হলেও অসম্ভব বুদ্ধিমতি। ম্যাজিশিয়ান ছেলের চরিত্রটা অদ্ভুত কিন্তু ভালো লাগার একটা বেপার ওর মধ্যে আছে। প্রথম দুই পাতা পড়ার পর আপনি পুরুটা এক নিশ্বাসে শেষ না করে পারবেন না।


1 comment: