সবার প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বিজ্ঞানের বই লিখছেন- অবশ্যই আনন্দিত এবং উত্তেজিত হবার মতো সংবাদ। কারণ বহুদিন যাবত তিনি সায়েন্স ফিকশন এবং কিশোর উপন্যাস লিখে গেলেও বিজ্ঞান নিয়ে খুব একটা বেশি লিখেন নি। তাই ভক্তদের মনে কিছুটা খেদ ছিলো। তবে তা ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বেশ কিছু বিজ্ঞানের বই এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বই রচনা করেছেন। এর মধ্যে “একটুখানি বিজ্ঞান” গ্রন্থটি অবশ্যই বিশেষ জায়গা দখল করবে। এটি সাহিত্য পত্রিকা ‘কালি ও কলম’এ তিন বছর ধরে লেখা বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক রচনার সংকলন। প্রাঞ্জল ভাষা প্রয়োগে দক্ষ জাফর ইকবাল যা-ই লিখেন তা-ই তাঁর পাঠকেরা লুফে নেয়, এ এক বিরল সাফল্য। সায়েন্স ফিকশন এবং কিশোর উপন্যাসে ইতোমধ্যেই একজন কিংবদন্তী মুহম্মদ জাফর ইকবাল বিজ্ঞান নিয়ে লিখছেন খুব বেশিদিন হয় নি। শূন্য দশকের গোঁড়ার দিকে ‘নিউরনে অনুরণন’, ‘আবারো নিউরনে অনুরণন’, ‘গণিত ও আরো গণিত’ এর মতো গণিতের বই লিখেছেন। এরপর অন্যান্য রচনার পাশাপাশি মনযোগী হয়েছেন বিজ্ঞানভিত্তিক রচনায়। আলোচ্য গ্রন্থটি ছাড়াও তিনি বিগত কিছু বছরে ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি, ‘কোয়ান্টাম মেকানিক্স’, ‘পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম পাঠ’-ইত্যাদি বিজ্ঞানের বই রচনা করেছেন যা বাঙালি পাঠকের জন্য বড়ো পাওয়া। বিজ্ঞানের প্রবন্ধ কিংবা রচনাগুলোও যে পাঠ-সুখকর হতে পারে তা যেন তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাবার পণ করেছেন। “একটুখানি বিজ্ঞান” গ্রন্থে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত লিখেন নি তিনি, বরং ছোট ছোট কিছু রচনা লিখে বিজ্ঞানের আকর্ষণীয় অংশগুলোর প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে তোলাই ছিলো তাঁর লক্ষ্য। বিষয় নির্বাচন নিয়ে লেখক নিজেই ভূমিকায় লিখছেন, ‘যেসব বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে পাঠকেরা সেখানে একবার চোখ বুলালেই বুঝতে পারবেন যে তার মাঝে খুব একটা মিল নেই, যে বিষয়গুলো আমার ভালো লাগে সেগুলোই বারবার উঠে এসেছে’। সায়েন্স ফিকশনে গোটা মহাকাশে বিচরণ করে বেড়ানো মুহম্মদ জাফর ইকবাল যখন বিজ্ঞানভিত্তিক প্রবন্ধ রচনা করবেন তখন সেখানে মহাকাশ, মহাবিশ্ব, টাইম মেশিন, এলিয়েনের অস্তিত্ব, ব্ল্যাক হোল ইত্যাদি উঠে আসবে তা খুবই স্বাভাবিক। টাইম মেশিন এবং বহির্জাগতিক প্রাণীর অস্তিত্ব এখনো সায়েন্স ফিকশনের পাতায় থাকলেও তিনি এর পেছনের বিজ্ঞানটুকু সবার কাছে তুলে ধরেছেন। ব্ল্যাক হোল নিয়ে লেখা দু’টি রচনা সবাইকে বিস্মিত করবে। আবার মহাজাগতিক ক্যালেন্ডারে মানবজাতির অবস্থান জেনে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে ভাবনায় পড়ে যেতে হবে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখেছেন বিজ্ঞান নিয়ে কিন্তু এর মাঝেও রোমান্টিকতা বাসা বেঁধেছে। আমাদের পরিচিত সেই অক্সিজেন নিয়ে লিখতে গিয়ে যখন তিনি সেই গ্যাসকে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান তখন চোখ কচলে তাকাতে হয়- এ কী সত্যিই বিজ্ঞানের প্রবন্ধ! তবে তাঁর রোমান্টিক ভাবনাগুলো পাঠকের মাঝেও তিনি ছড়িয়ে দেন যখন পাঠক জানতে পারে যে তারা সবাই আসলে একেকটি নক্ষত্রের সন্তান। তিনি প্রশ্ন রাখেন-‘ যে মানুষ নক্ষত্রের অংশ সে কি কখনও কোনো ছোট কাজ করতে পারে? করা কি উচিৎ?’ মুহম্মদ জাফর ইকবাল পড়াশুনা করেছেন পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে এবং পরবর্তীতে গবেষণা ও শিক্ষকতা করেছেন তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে। এসব বিষয়ও “একটুখানি বিজ্ঞান” গ্রন্থে উঠে এসেছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং থিওরি অব রিলেটিভিটির মতো জটিল বিষয় অল্প কিছু পাতায় বুঝানো সম্ভব নয়, তবুও তিনি বিষয়গুলোর কিছু ধারণা দেবার চেষ্টা করেছেন (এই দু’টো বিষয় নিয়ে উনি পরবর্তীতে ‘কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ এবং ‘থিওরি অব রিলেটিভিটি’ নামে দু’টো বই লিখেছেন)। স্ট্রিং থিওরির ওপর রচিত প্রবন্ধটি আলোচ্য গ্রন্থের সবচেয়ে দারুণ রচনাগুলোর একটি। এছাড়াও বিগ ব্যাং, ফাইবার অপটিক্স, তথ্যপ্রযুক্তি নিয়েও গোটা কয়েক ছোট ছোট রচনা এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে লিখতে গিয়ে তিনি যখন বলেন, ‘পৃথিবীটাকে জঞ্জালমুক্ত করার জন্য আমাদের বিজ্ঞানী আর প্রযুক্তিবিদদের মুখের দিকেই তাকাতে হবে। কারণ শুধু তারাই পারবেন আমাদের সত্যিকারের পৃথিবী উপহার দিতে’- তখন আমাদেরও আশাবাদী হয়ে উঠতে ইচ্ছে করে। পাঠকের জন্য এই বইয়ের সবচেয়ে বড়ো চমক হলো যখন তারা দেখতে পাবে যে পদার্থবিদ এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী মুহম্মদ জাফর ইকবাল জীববিজ্ঞান নিয়ে লিখেছেন! হ্যাঁ, অত্যন্ত সাফল্যেই সাথেই তিনি কাজটি করতে পেরেছেন। মস্তিষ্ক নিয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবালের আগ্রহ আমরা তাঁর সায়েন্স ফিকশনগুলো পড়লেই টের পাই। এই গ্রন্থে মস্তিষ্ক নিয়ে তাঁর রচিত কয়েকটি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অটিজম নিয়ে একটি রচনা, ডিএনএ নিয়ে একটি ছোট্ট প্রবন্ধ। এই অংশেই দেখা মিলবে এই গ্রন্থের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনাটি- ‘একটি জীবাণুর বক্তৃতা’। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার সাথে কীভাবে সৃজনশীলতা মিশে কীভাবে অসাধারণ একটি সাহিত্যকর্ম হয়ে ওঠে তা উক্ত রচনাটি পড়লেই যে কেউ বুঝতে পারবে। সূচীপত্রের পেছনের দিকের লেখাগুলো নিয়ে আলোচনা করলেও প্রথমদিকের লেখাগুলো নিয়ে এতক্ষণ কিছু বলি নি। সত্যি বলতে, বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানীদের নিয়ে লেখা এই প্রবন্ধ ক’টিই এই গ্রন্থের প্রাণ। এইসব রচনাগুলোয় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার আবির্ভাব, পর্যবেক্ষণের সূচনা, বিজ্ঞানের ভাষা গণিত, বিজ্ঞানীর গবেষণা প্রক্রিয়া ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্থক্য সম্বন্ধে আমাদের সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করেন । কারণ, তাঁর ভাষায়-‘ ভোগবাদী পৃথিবীতে এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিকে আলাদা করে দেখা- তা না হলে আমরা কিন্তু খুব বড়ো বিপদে পড়ে যেতে পারি’। বিজ্ঞানের বইয়ে প্রয়োজনীয় ছবি এবং আলোকচিত্রের সন্নিবেশ ঘটানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ- যা আলোচ্য বইয়ে ঘটেছে। বইয়ের ইলাস্ট্রেশান দৃষ্টিসুখকর। সব মিলিয়ে “একটুখানি বিজ্ঞান” নান্দনিক একটি বিজ্ঞান গ্রন্থ হয়ে উঠেছে।
Download Bangla books in pdf form and also read it online.
'bangla-boi, boimela, humayun ahmed, bangla boi, ebook, bangla-ebook,
bangla-pdf, bangla book, bangla pdf, zafar iqbal, boi, bengali books
download, Ektukhani Biggan - Muhammad Zafar Iqbal'
No comments:
Post a Comment