আমি কী আয়না মেয়ে মা? মীন ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তুমি সত্যি মেয়ে। আয়না মেয়ে না। তুমি মানবশিশু। মানবশিশু মানে কী মা? মীন বলল, মানবশিশু এমন এক শিশু যে আকাশের মত ভালবাসতে পারে। মা! আমি কী আকাশ? অবশ্যই তুমি আকাশ মা। গল্পটা রোবটের যুগের, গল্পটা নামবিহীন শহরের, গল্পটা লটারির যুগের, গল্পটা ক্রেডিটের যুগের, গল্পটা ৪০০৯ সালের এবং গল্পটা ননিতা, কুন ও মীনের। ভবিষ্যতের পৃথিবী। মানুষের কথা হবে, শুধু কম্পিউটারের সাথে। নিজের থেকে কোন কিছু করার ক্ষমতা নেই মানুষের। সব কিছু কম্পিউটার নির্ভর। মানুষ থাকা খাওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় সব কাজ রোবটরা করবে, এমনকি সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্তটি তারা নিবে। পৃথিবীতে প্রতি চার বছর পর পর একদিন ছুটি থাকে। সেদিন রাত এগারটা পর্যন্ত মানুষ বাইরে ঘুরতে পারে। অন্যাথায় বাইরে ঘুরতে চাইলে সিডিসিকে ১০০ ক্রেডিট দিতে হবে। সিডিসি হল এই যুগের প্রধান। আজ চন্দ্রাবতীর দিন, তাই মানুষ বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে । এই দিনে লটারির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কোন মহিলা সন্তান জন্ম দিবে। ননিতার বয়স, ৪১ এই কাজ তার দ্বারা সম্ভব না। কারন লটারিটেতে ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে কোন মহিলার নাম আসে না। কিন্তু কীভাবে যেন ননিতার নাম চলে আসে। রোবট নিয়ন্ত্রিত এই যুগে এই রকম হওয়ার কোন সুযোগ নেই! তাহলে এমন কী করে হল? ননিতা একদিন ভুল করে পথ হারিয়ে ফেলে। তাকে লাল কুটিরে নিয়ে আসা হয়। লাল কুটির এমন একটি জায়গা যেখান থেকে ফিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এখানে মূলত অপারাধীরা থাকে। কিন্তু ননিতা ত কোন অপারাধী নয়। লাল কুটিরে অপারাধীদের হত্যা করা হয় না বরং তাদের স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে দেওয়া হয়। সবুজ গাড়ী এসেছে ননিতাকে নিয়ে যেতে আজই তার স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে দেওয়া হবে। না এবারও রোবট জগতে ব্যতিক্রম কিছু হল। কিন্তু রোবটরা সবসময় নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে। এই রকম ব্যতিক্রম হওয়ার কোন প্রশ্ন হতে পারে না। সিডিসি মীন নামের এক SF রোবট বা আয়না মানবীকে পাঠিয়েছেন ননিতার স্বামী কুইনকে হত্যা করতে। কিন্তু মীন তা করতে অস্বীকার করে। একজন রোবট কী কখনও তার নির্দেশের ব্যতিক্রম করতে পারে না! কখনও করতে পারে না। কিন্তু ননিতার বেলায় কেন সব নির্দেশের ব্যতিক্রম হচ্ছে। ননিতাদের শহরে V305 ভাইরাসের আক্রমন হয়েছে। এই ভাইরাস আক্রমন হয়েছে। এই ভাইরাস আক্রমন করলে শহরের কোন বাসিন্দা বেচে থাকতে পারে না। এই ভাইরাসটা না কী রোবটরা বানিয়েছে। কিন্তু রোবটরা এমন কোন কাজ করতে পারে না, যার কারনে মানুষের ক্ষতিসাধন হয়। তাহলে রোবটরা এই ভাইরাস কেন বানিয়েছে? এই ভাইরাসে কী আয়না মানবীরাও কী মারা যাবে, যেহেতু তারা,দেখতে অবিকল মানুষের মত, তাদের আচরনও মানুষের মত, আর ননিতা কী আগের মত এইবারও কী ভিন্ন ভাবে বেচে যাবে? লেখক গল্পে আমাদের দেখিয়েছেন, রোবট যুগের মানুষদের জীবন। তাদের জীবনে নেই স্বাধীনতা, তারা খাচায় বন্দি পাখির মত। যদি তাদের কোন কাজ করতে হয় না, তবু তারা এই জীবন নিয়ে সুখী নয়। গল্পে আমার মীনের চরিত্রটি ভাল লেগেছে। সে সবসময় ননিতাকে যন্ত্রনা দিত। গল্পে মহান শিল্পী আহানের চরিত্রটিও বেশ ভাল লেগেছে, যার গান শুনার জন্য মানুষ পাগল ছিল। তবে আর লালকুটিরে বিজ্ঞানী শেনের চরিত্রটি হয়ত আরেকটু সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলা যেত। সবকিছু মিলিয়ে বইটি বেশ, দারুন ছিল, আপনারাও পড়ে নিতে পারেন। বইয়ে যে লাইনটি সবচে ভাল লেগেছে তা হল, গাদা নামক প্রানীটি অনেক আগেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু তাকে জড়িয়ে গালিটা এখনও রয়ে গেছে।
Sunday, January 1, 2012
Manobi by Humayun Ahmed (মানবী)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment