
হিমু আর তামান্নার বিবাহের কার্ডটা সুন্দর।ধবধবে সাদা কার্ডে রূপালি লেখা। জ্যোৎস্না জ্যোৎস্না ভাব। বিয়ের তারিখও পড়েছে পূর্ণিমা রাতে। রূপা হাসলো। এম্নিতে সে খুব কম হাসে।ছোটবেলায় কেউ বোধহয় তাকে বলেছিলো কম হাসতে। তাকে বিষন্ন অবস্থায় দেখতে ভাল লাগে। ব্যাপারটা তার মাথায় ঢুকে গেছে, সে জন্যেই সারাক্ষণ বিষন্ন থাকে। এই নিয়ে সে হাসলো চারবার, পঞ্চমবার হাসলেই ম্যাজিক নাম্বার পূর্ণ হবে। তখন আমাকেই চলে যেতে হবে।---”হাসছ কেন রূপা?----তুমি বদলে যাচ্ছ এই জন্যে হাসছি। মানুষকে আগে তুমি ধোঁকা দিতেনা এখন দিচ্ছ।---কাকে ধোঁকা দিচ্ছি? তামান্না নামের মেয়েটাকে দিচ্ছ।বিয়ের রাতে সবাই উপস্থিত হবে শুধু তুমি হবেনা।তুমি জ্যোৎস্না দেখতে জংগলে চলে যাবে।মেয়েটার কি হবে ভেবেছ কখনো?===গাজীপুর জংগল শালবনে জ্যোৎস্না দেখতে ঢুকে গেলাম।/আমি ঘর ছাড়িয়া বাহির হইয়া জ্যোৎস্না ধরতে যাই।/হাত ভর্তি চাঁদের আলো, ধরতে গেলে নাই।/তামান্নার হাত ধরা হলোনা আর/কারণ হিমুরা কারো হাত ধরেনা। /হাত ধরলেই মায়ায় পরে যাবে, মায়া তখন অসহায়।/পৃথিবীও তখন অসহায় হয়ে যাবে মায়ার কাছে।===হিমু বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় চরিত্র। হিমু একজন বাউন্ডুলে ধরনের যুবক।বয়স ২৫-৩০ বছরের মধ্যে। তার পোশাক ও গেট-আপ কিছু কিছু মানুষের কাছে বিরক্তিকর । সে খুব একটা সুদর্শন না কিন্তু তার চোখ ও হাসি খুব সুন্দর হিমু চরিত্রের আসল নাম হিমালয়। এ নামটি রেখেছিলেন তার বাবা। যার বিশ্বাস ছিল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা যায় তবে একইভাবে মহাপুরুষও তৈরি করা সম্ভব। তার মহাপুরুষ তৈরির বিদ্যালয় ছিল যার একমাত্র ছাত্র ছিল তার সন্তান হিমু। উপন্যাসে প্রায়ই তার মধ্যে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার প্রকাশ দেখা যায়। যদিও হিমু নিজে তার কোন আধ্যাত্মিক ক্ষমতার কথা স্বীকার করে না। হিমুর আচার-আচরণ বিভ্রান্তিকর। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তার প্রতিক্রিয়া অন্যদেরকে বিভ্রান্ত করে, এবং এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হিমুর অত্যন্ত প্রিয় একটি কাজ।/লেখক পরিচিতি: হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক গণ্য করা হয়। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক।
No comments:
Post a Comment