আচ্ছা হিমু হতে হলে কি বড় হতে হয় ? অনেক বড় ? নাকি ছোটরাও হিমু হতে পারে ? কীভাবে হিমু হতে হয় ? আমি জানি না । তবে টগরের হিমু মামা জানে। টগর স্ট্যান্ডার্ড সিক্সে পড়ে । অতি ভালো ছেলে তবে দুষ্টুর শিরোমনি আর কি ! আজ সন্ধ্যায় টগরদের বাসায় ধুন্ধুমার কান্ড হবার কথা আছে । টগরের ছোটমামা অর্থাৎ শুভ্রকে ছেঁচা দেওয়া হবে । ছেঁচা দিবেন টগরের বড় চাচা চৌধুরী আজমল হোসেন । শুভ্র ভয়ানক অন্যায় করে ফেলেছে । বুধবার সকাল এগারোটায় হলুদ পাঞ্জাবি পরে হঠাৎ করেই সে হিমু হয়ে গেছে । শুভ্র ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছে । খুব ভালো ছাত্র । টগর তার মামার খুব ভক্ত । মামার কাছ থেকে এখন সে ট্যারা হওয়ার ট্রেনিং নিচ্ছে । টগরের মামা খুব ভালো ট্যারা হতে পারে । টগরদের বাসায় বাবা-মা , দাদিয়া , বড় চাচা , ছোট মামা আর ছোটবোন নিলু থাকে । বাসার সবার কান্ডকারখানা পড়লে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যাবে । টগরের মা নানা রকম স্পেশাল আইটেম রান্না করেন । তবে সেগুলো খেতে বিদঘুটে হয় বলে বাসার কেউ খেতে পারে না । বড় চাচাকে বাসার সবাই ভয় পায় । তিনি টগরদের বাড়ির যে কোন অন্যায়ের বিচার করে থাকেন । দাদিয়া ছাড়া আর কারো বড় চাচার মুখের উপর কথা বলার সাহস নেই । দাদিয়া খুব ভালো । বাচ্চাদের খুবই আদর করেন । টগরের ধারণা তার স্ট্যান্ডার্ড সেভেনে পড়া বড় বোন নিলুর মাথায় কোন বুদ্ধি নেই , সে ঝগড়াটে স্বভাবের । ও টগর সম্পর্কে তেমন কিছুই তো বলা হল না । টগরের একটা গোপন জায়গা আছে । সিঁড়িঘরের সঙ্গের যে বাথরুম সেটার ফলস সিলিং হল টগরের গোপন জায়গা । thief box নামের একটা বাক্সে ছুরি করা জিনিস সে অল্প কিছু দিনের জন্য লুকিয়ে রাখে । তারপর যথাস্থানে ফেরত দেয় । পাপ-পুণ্যের হিসাব রাখার জন্য তার একটা খাতা আছে । টগর সারাদিন কী কী পাপ-পুণ্য করেছে তার হিসাব এই খাতায় লিখে রাখে । তার ধারণা দুষ্টুমি করলে পাপ হয় আবার ভালো কাজ করলে পাপ কাটা গিয়ে পুণ্য হয় । একারণেই দুষ্টুমি করলে ভালো কাজ করে পাপ কেটে দেয় । সন্ধ্যার পর বিচার শুরু হলে জানা গেল হিমু হওয়ার জন্য শুভ্র ছাদে মাটি তোলার জন্য লোক রেখেছে । বড় চাচা বিচার সভায় ঠিক করলেন শুভ্র কেন হিমু হতে চায় এটা নিয়ে তাকে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে । প্রতিবেদন বড় চাচার কাছে জমা দিয়েই শুভ্র হিমু হওয়ার তপস্যা পুরোপুরি শুরু করে দিল । চৌবাচ্চার পানিতে গলা ডুবিয়ে বসে থাকা শুরু হল । ব্যাস , ওমনি চারদিকে নানা মজার ঘটনা ঘটতে লাগল । টগরের দুষ্টুমির মাত্রাও বেড়ে গেল , বাসায় নানা রকম অদ্ভূত ঘটনা ঘটা শুরু হল কিন্তু বড়রা সেগুলোর কিছুই ধরতে পারে না । টগরের রাগী গৃহশিক্ষক রকিব উদ্দিন ভূঁইয়া ও একসময় শুভ্রর সাথে পানিতে নেমে গেলেন । শুভ্রর চিকিৎসা করার জন্য নিয়ে আসা হল সাইকিয়াট্রিস্ট শামসুক হক পিএইচডি কে । ইউনিভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষার জন্য শুভ্র পানি থেকে উঠে পড়ল । বোকা সাইকিয়াট্রিস্ট শুভ্র ভেবে তিন ঘন্টা চৌবাচ্চায় কাটিয়ে দিলেন রকিব স্যারের সাথে আর বাসার সবাই তাকে গাধার বাচ্চা বলে গালি দিল । এদিকে এই ক'দিনে টগর ট্যারা হওয়া সিখে গেল । স্কুলের সবাই তাকে এখন ডাকে ট্যারা টগর । মূলত ছোটদের বই হলেও ছোট বড় নির্বিশেষে সকলেরই এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলের মত বই । ছোট বন্ধুরা হিমু মামা না পড়লে কিন্তু মজা মিস হয়ে যাবে ।
No comments:
Post a Comment