হুমায়ূন আহমেদের হিমু সিরিজের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় বই দরজার ওপাশে। বইটি জ্ঞানকোষ প্রকাশনী থেকে মে ১৯৯২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। হিমুর পুরো নাম হিমালয়। এ নাম তার বাবার রাখা। হিমুর বাবা হিমালয় নাম রেখেছিলেন, কারণ তিনি চেয়েছিলেন তার ছেলে হিমালয়ের মত বিশাল ও বিস্তৃত হোক, কিন্তু ধরা-ছোঁয়ার বাইরের কেউ নয়, তাকে যেন হাত দিয়ে স্পর্শ করা যায়। যেমন স্পর্শ করা যায় হিমালয় পর্বতকে। হিমুর বাবার স্বপ্ন ছিল তিনি হিমুকে মহাপুরুষ বানাবেন। কিন্তু হিমুর আসলে কি স্বপ্ন ছিল? সে কি আসলেই মহাপুরুষ হতে চেয়েছিল? আমরা হিমুর বাবার আকাঙ্ক্ষার কথা জানি, কিন্তু হিমুর আকাঙ্ক্ষার কথা জানি না। হুমায়ূন আহমেদ দরজার ওপাশে বইয়ে হিমুর আকাঙ্ক্ষার স্বরূপ খোঁজার প্রয়াস পেয়েছেন। বইয়ের গল্প শুরু হয় হিমুর মেস থেকে। তারপর নদীর পানির মত কাহিনী গড়াতে থাকে। হুমায়ূন আহমেদ তাঁর অস্বাভাবিক সম্মোহনী ক্ষমতার দ্বারা মুহূর্তের মধ্যেই পাঠককে গল্পের ভিতরে টেনে নিয়ে যান। গল্পের ভিতরে ধীরে ধীরে হিমুর বন্ধু রফিক, জহির, রফিকের স্ত্রী রানু, জহিরের বোন তিতলী, জহিরের বাবা তেল ও জ্বালানী মন্ত্রী মোবারক হোসেনের আগমন ঘটে। আর হিমুর অন্যান্য বইয়ের মতই অবধারিতভাবেই ঘটনাচক্রে এসে যুক্ত হয় হিমুর ফুফা, ফুফাতো ভাই বাদল আর একজন পুলিশের ওসি। কখনও হাস্যরসে, কখনও সংলাপের শক্ত গাঁথুনি দিয়ে, কখনও বা খুব স্বাভাবিক কথার ভিতরেও দর্শন মিশিয়ে দিয়ে হুমায়ূন আহমেদ নিরন্তর পাঠককে টানতে থাকেন। এই বইয়ের অসাধারণ অলংকার হল কিছু জোছনা রাতের অতিপ্রাকৃত পরিবেশের সম্মোহনী বর্ণনা যা পাঠককে সহজেই বিভ্রমের বেড়াজালে আক্রান্ত করে ফেলে। আর হিমুর সর্বজনীন সত্যের পিছনে ছুটে চলার কাহিনী পুরো বই জুড়েই বিস্তৃত হয়েছে, যা হিমু ভক্তদের অবশ্যই আনন্দ দিবে। সব মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের দরজার ওপাশে দারুণ একটি বই। একবার শুরু করলে শেষ না করে উঠা যায় না, এমন একটি বই। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বইটি সকল হুমায়ূন ভক্তদের অবশ্যপাঠ্য।
Monday, July 9, 2018
Dorjar Opashe By Humayun Ahmed (দরজার ওপাশে হুমায়ূন আহমেদ)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment